টিস্যু কালচার (14.2)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) জীবপ্রযুক্তি | - | NCTB BOOK
153
153

উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে টোটিপোটেন্ট (totipotent) স্টেম কোষ থাকায় এর প্রায় যেকোনো অংশ থেকে হুবহু আরেকটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ জন্মানো সম্ভব, এটিই টিস্যু কালচারের মূলনীতি। সাধারণত এক বা একাধিক ধরনের এক গুচ্ছ কোষসমষ্টিকে টিস্যু (Tissue) বা কলা বলা হয়। এই এক গুচ্ছ কোষ উৎপত্তিগতভাবে অভিন্ন এবং সম্মিলিতভাবে একই কাজ করে। একটি টিস্যুকে জীবাণুমুক্ত পুষ্টিবর্ধক কোনো মিডিয়ামে (Nutrient medium) বর্ধিতকরণ প্রক্রিয়াই হলো টিস্যু কালচার। টিস্যু কালচার উদ্ভিদবিজ্ঞানের একটি অপেক্ষাকৃত নতুন শাখা। উদ্ভিদ টিস্যু কালচারে উদ্ভিদের কোনো বিচ্ছিন্ন অংশ বা অঙ্গবিশেষ (যেমন পরাগরেণু, শীর্ষ বা পার্শ্বমুকুল, পর্ব, মূলাংশ ইত্যাদি) কোনো নির্দিষ্ট পুষ্টিবর্ধক মিডিয়ামে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় কালচার করা হয়। মিডিয়ামগুলোতে পুষ্টি এবং বর্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান সরবরাহ করা হয়। টিস্যু কালচারের উদ্দেশ্যে উদ্ভিদের যে অংশ পৃথক করে নিয়ে ব্যবহার করা হয় তাকে 'এক্সপ্ল্যান্ট (Explant)' বলে।

common.content_added_by

টিস্যু কালচার প্রযুক্তির ধাপসমূহ (14.2.1)

181
181
common.please_contribute_to_add_content_into টিস্যু কালচার প্রযুক্তির ধাপসমূহ.
common.content
common.content_added_by

টিস্যু কালচারের ব্যবহার (14.2.2)

221
221

টিস্যু কালচার প্রযুক্তির কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আজকাল উদ্ভিদ প্রজননের ক্ষেত্রে ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে এবং এ ক্ষেত্রগুলোতে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্ভিদাংশ থেকে কম সময়ের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অসংখ্য চারা সৃষ্টি করা যায়। সহজেই রোগমুক্ত, বিশেষ করে ভাইরাসমুক্ত চারা উৎপাদন করা যায়। ঋতুভিত্তিক চারা উৎপাদনের সীমাবন্ধতা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। স্বল্পসময়ে কম জারপার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক চারা উৎপাদনের সুবিধা থাকায় চারা মজুদের সমস্যা এড়ানো যায়। যেসব উদ্ভিদ বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে না, সেগুলোর চারাপ্রাপ্তি এবং স্বল্পব্যয়ে দ্রুত সতেজ অবস্থায় স্থানান্তর করা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ উৎপাদন এবং সংরক্ষণ করতে টিস্যু কালচার নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি হিসেবে স্বীকৃত। যেসব ভূণে শস্যকলা থাকে না, সেসব ভ্রুণ কালচার করে সরাসরি উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়। যে সকল উদ্ভিদে যৌনজনন অনুপস্থিত অথবা প্রাকৃতিকভাবে জননের হার কম, তাদের দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা যায়। নতুন প্রকৃতির উদ্ভিদ উদ্ভাবনে টিস্যু কালচার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফরাসি বিজ্ঞানী George Morel (1964) প্রমাণ করে দেখান যে সিম্বিডিয়াম (Cymbidium) নামক অর্কিড প্রজাতির একটি মেরিস্টেম থেকে এক বছরে প্রায় 40 হাজার চারা পাওয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, সাধারণ নিয়মে একটি সিম্বিডিয়াম উদ্ভিদ থেকে বছরে মাত্র অল্প কয়েকটি চারা উৎপন্ন হয়। থাইল্যান্ড টিস্যু কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে এক বছরে 50 মিলিয়ন অণুচারা উৎপন্ন করে, যার অধিকাংশই অর্কিড। এই ফুল রপ্তানি করে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। 1952 সালে মার্টিন নামক বিজ্ঞানী মেরিস্টেম কালচারের মাধ্যমে রোগমুক্ত ডালিয়া ও আলুগাছ উদ্ভাবন করেন। মেরিস্টেম হলো উদ্ভিদের বর্ধিষ্ণু অংশ যেখানে এমন ধরনের অবিশেষায়িত (undifferential) কোষ পাওয়া যায় যেগুলো উপযুক্ত উদ্দীপনা সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ বা টিস্যু (যেমন: শাখা-প্রশাখা, পাতা, মূল ইত্যাদি) তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে মেরিস্টেম কালচারের মাধ্যমে কোনো কোনো ভাইরাস আক্রান্ত ফুল, ফল ও সবজি গাছকে (যেমন আলুর টিউবার) রোগমুক্ত করা টিস্যু কালচারের একটি নিয়মিত কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। মালয়েশিয়ায় Oil Palm -এর বংশবৃদ্ধি টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চন্দ্রমল্লিকার একটি অঙ্গজ টুকরা থেকে বছরে ৪৪ কোটি চারা গাছ পাওয়া সম্ভব। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে জুই (Jasminum) সাস্পেনসান থেকে সুগন্ধি আতর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। উড়োজাহাজ, রকেট প্রভৃতি ভারী ইঞ্জিন চলানোর জন্য এক রকমের তিমি মাছের (Sperm whale) তেলের প্রয়োজন হয়। এই তিমি মাছ ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র জোজোবা (jojoba) নামক গাছ হতে নিষ্কাশিত তেল বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এই গাছ এক বিশেষ মরুভূমির পরিবেশ ছাড়া (যেমন Arizona, California) জন্মায় না এবং এদের বংশবৃদ্ধিও অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এই গাছের দ্রুত বংশবৃদ্ধি করাই কেবল সম্ভব হয়নি, একে ভারতবর্ষের জলবায়ু উপযোগীও করে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যেমন, বিভিন্ন প্রকার দেশি ও বিদেশি অর্কিডের চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। রোগ প্রতিরোধী এবং অধিক উৎপাদনশীল কলার চারা, বেলের চারা, কাঁঠালের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, লিলি, কার্নেশান প্রভৃতি ফুল উৎপাদনকারী বৃক্ষের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। বিভিন্ন ডালজাতীয় শস্য, বাদাম ও পাটের চারার উৎপাদন করা হয়েছে। টিস্যু কালচার প্রয়োগ করে আলুর রোগমুক্ত চারা এবং বীজ মাইক্রোটিউবার (প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত আলু তথা টিউবারের চেয়ে বেশ ছোট আকারের টিউবার যা বপন করে আলু উৎপাদন করা সম্ভব) উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion